বীর নারী রাজবাড়ির মেয়ে গীতা কর ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরে সেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । গীতার পিতা একাত্তরের ৫ মে নিহত হন। সর্বস্ব ত্যাগ করে গীতা ভারতে চলে যান। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীকে বাংলাদেশের পক্ষ নেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। গাইড হিসাবেও কাজ করেন তিনি। একাত্তরের ২ জুলাই গীতা কর গেরিলা ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। ট্রেনিং শেষে আগরতলায় ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ হাসপাতালে মেডিক্যাল এটেনডেন্ট হিসেবে তিনি কাজ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দানে তিনি ছিলেন অন্ত প্রাণ। বাহাত্তরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কিছু যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
দেশ মুক্তির পর একই প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে শারীরিক কারণে সেখান থেকে অবসর নিয়ে রাজবাড়িতে নিজ বাড়িতে উনার মায়ের সাথে অবস্থান করছেন। আজকের এই পোষ্ট তার চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের চালচিত্র।
গীতা করের জন্ম গ্রামীণ উচ্চ-মধ্যবিত্ত এক কৃষক পরিবারে। ১১ বোনদের মধ্যে গীতা করই প্রথম সন্তান। তাই বাল্যকাল হতে পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট অন্য বোনদের দেখা শুনাও করতে হতো। শুধু তাই তাদের ছিল যৌথ পরিবার। সে পরিবারে ছিল তার ১৮ ভাই বোন। বাবা জিতেন্দ্র কর ছিলেন কিছুটা আধুনিক মনা এবং সামাজিক কুসংস্কার মুক্ত মানুষ। রাজবাড়ি শহরে জায়গা কিনে বাড়ি করে পরিবারের সবাইকে শহরে নিয়ে আসেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে- সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা পেতে হলে তা শহরে বাস ছাড়া সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর থেকে সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ, অরাজকতা, খুন, রাহাজানি, লুটতরাজ! রাজবাড়ির স্বজ্জনকান্দা গ্রামেও শুরু হয়ে যায় লুটপাট আর অত্যাচার। এই পরিস্থিতিতে জিতেন্দ্র কর দিশেহারা হয়ে পড়েন। ২০ এপ্রিল মেয়েদের সম্ভ্রম হারানোর আশংকায়, বড় চার মেয়েকে নিয়ে অন্য গ্রামে আপন শ্যালকের বাড়ি চলে যান। ১৫ দিন যাবার পর ৫ই মে শ্যালকের বাড়ি আক্রমণের শিকার হয় । বাড়ির যাবতীয় মালামাল লুট হয়, এবং লুটেরাদের ছোরার আঘাতে জিতেন্দ্র কর নির্মম ভাবে নিহত হন।
এরপর দুষ্কৃতিকারীরা সে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দেয়। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য! গীতা কর ও অন্য তিন বোন -প্রাণ প্রিয় মৃত বাবার রক্তাক্ত দেহ, শিয়াল কুকুরে খাবে জেনেও প্রাণ নিয়ে,নিঃস্ব হয়ে এক কাপড়ে মামাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পথে অকথ্য কষ্ট স্বীকার করে, হাজার হাজার বাস্তুত্যাগীদের সাথে মিশে নয় দিন পায়ে হেটে ফরিদপুর, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা পার হয়ে শিকার পুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাসিমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় লন।
জিতেন্দ্র করের মৃত্যুর পর তার নিজের বাড়িও লুটপাট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে গীতা করের মা সন্ধ্যা কর বাকী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসেন অবশেষে ১৫/২০ দিন পর তিনিও ভারতে এসে বোনের বাড়িতে অন্যদের সাথে মিলিত হন।
ভারতে মাসীর বাড়িতেও অবস্থা সুখের ছিলনা। খাদ্য হিসাবে ছিল জংগলের কচু ও ক্যাম্পের আতপ চাল। তাও তিন বেলা জুটতো না। ক্যাম্প থেকে চাল উঠানো ছিল আরও দুর্ধর্ষ ব্যাপার! সেই কাক ডাকা ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষ চালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। সারাদিন মানুষে মানুষে ধাক্কা ধাক্কি ও গালাগাল হজম করে কয়েকটি চাল পাওয়া যেত।
ভারতে যাবার পর থেকে গীতা করের মনের মধ্যে পিতৃহত্যা, নিজ আবাস ধ্বংস, নিজ দেশ থেকে অন্যায় ভাবে বিতাড়নের কারণে মনে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল! কেমন করে সেই সব ঘাতকদের ধ্বংস করা যায়, সে চিন্তায় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণের উপায় খুঁজতে থাকেন।
কোলকাতায় এসে সাজেদা চৌধুরী, নূর জাহান মোর্শদ, বদরুন্নেছা আহমদের সাথে দেখা করেন। গীতা কর ও উনার বোন ইরা কর মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেন। এরপর প্রতিদিন ভোরে এক মুঠো পান্তা ভাত খেয়ে ২৫টি স্টেশন পাড়ি দিয়ে কোলকাতার সি,আই,টি রোডে যাওয়া আসা শুরু করেন। এই ভাবে এক মাস যাবার পর মাত্র ৭ জন বাংলাদেশী মেয়েকে নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বর্তমান বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীর তত্বাবধাণ কোলকাতায় নকশালদের একটি পরিত্যক্ত বাড়িকে প্রশিক্ষণের জন্য ঠিক করা হয়। সাত জন মেয়েদের মধ্যে গীতা কর ও উনার বোন ইরা কর, তুষার, কণা, মণ্ডল, আরতি সাহা, সাবিত্রী পোদ্দার ছিলেন। ১৯৭১ এর ২রা জুলাই রোজ রবিবার ক্যাম্প উদ্বোধন হয়। সেই ক্যাম্পে তাদের দেওয়া হয়- একদম কম দামের ২টি শাড়ি, একটি মগ, ছোট একটি কম্বল।
এবার শুরু হল লড়াই শেখার সংগ্রাম। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কিছু মেয়ে এসে ট্রেনিং এ শরিক হয়। এখানে খেতে দেওয়া হত সব চেয়ে নিকৃষ্ট মানের কাঁকর মেশান ভাত। সবাইকে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করা হয়। চাল বাছার দল, বাজার করার দল, রান্না করার দল। সকালে এক মগ চা, দুপুরে কাঁকর মেশানো ভাতের সাথে ডাল। রাতেও ডাল ভাত। মাঝে মাঝে সবজি জুটে যেত। ভোর পাঁচটা হতে হতো দিনের কর্মসূচি। প্রথমে শরীর চর্চা। গাছে চড়া, ক্রলিং, সাঁতার চলত সারাদিন। কোলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে ক্লাস করাতেন। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর আলোচনা করতেন। সেন্ট জনস এম্বুলেন্স থেকে লোক এসে ফাস্ট এইড সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন। ট্রেনিং চলা কালে বাইরের লোকজন বা আত্মীয় স্বজন হয়ে পড়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী প্রায় এসে মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সান্ত্বনা দিয়ে যেতেন। তবে নূর জাহান মোর্শেদ, বদরুন্নেছা কম আসতেন।
দিনে দিনে কোলকাতার সেই পরিত্যক্ত নকশাল বাড়ির ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ইচ্ছুক মহিলাদের সংখ্যা বাড়তে লাগে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের পড়ুয়া মেয়েরাও এসে যোগদেয়। তাদের মধ্যে বিভা সরকার, যূথিকা চ্যাটার্জী, লায়লা পারভিন, হাফিজা আক্তার, শিরিন বানু মিতিল, জিন্নাতুন্নেছা তালুকদার ছিলেন। অবশেষে মেয়েদের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়।
বীর নারী রাজবাড়ির মেয়ে গীতা কর ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরে সেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । গীতার পিতা একাত্তরের ৫ মে নিহত হন। সর্বস্ব ত্যাগ করে গীতা ভারতে চলে যান। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীকে বাংলাদেশের পক্ষ নেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। গাইড হিসাবেও কাজ করেন তিনি। একাত্তরের ২ জুলাই গীতা কর গেরিলা ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। ট্রেনিং শেষে আগরতলায় ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ হাসপাতালে মেডিক্যাল এটেনডেন্ট হিসেবে তিনি কাজ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দানে তিনি ছিলেন অন্ত প্রাণ। বাহাত্তরের জানুয়ারির ১৬ তারিখে কিছু যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
দেশ মুক্তির পর একই প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে শারীরিক কারণে সেখান থেকে অবসর নিয়ে রাজবাড়িতে নিজ বাড়িতে উনার মায়ের সাথে অবস্থান করছেন। আজকের এই পোষ্ট তার চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের চালচিত্র।
প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায় এসে প্রশিক্ষণরত মেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয়, তাদের মধ্যে কে দলের নেতৃত্ব দিবে তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় গোলযোগ। তার উপর যুদ্ধক্ষেত্রে বিমানে করে যাবার বায়না। সাথে সকল সুযোগ সুবিধা।
সারা দেশ যেখানে শত্রু কবলিত তখন যুদ্ধ করতে আসা নেতৃস্থানীয়দের এই সব সুযোগ সুবিধা চাওয়া দেখে গীতা কররা অবাক হলেন! এই সব দাবি দাওয়া আর কে হবেন দলনেতা ,তাই নিয়ে বেশ কয়েকদিন চলে গেল।
তারপর প্রস্তাব আসে কারা বিনা দাবি দাওয়ায়, বিনা সুযোগ সুবিধায় যুদ্ধে যেতে চায়! শেষ পর্যন্ত ২০০ মেয়েদের মধ্য গীতা কর সহ মাত্র ১৫ জন মেয়ে যুদ্ধে যেতে আগ্রহ জানায়। এই ১৫ জনের দলের দল নেতা করা হলো অনিলা বিশ্বাস নামের এক মেয়েকে। অনিলা ছিলেন কলেজ ছাত্রী, গোপালগঞ্জের মেয়ে। এই দলের অন্য যারা তারা হল- গীতা কর, ইরা কর, অঞ্জলি চৌধুরী,শেফালী দাস, শোভা বৈরাগী, অনিমা ওঝা, গীতা মজুমদার,রঞ্জিতা বিশ্বাস, লক্ষ্মী মন্ডল, বিশাখা মন্ডল, ছায়া হালদার, মঞ্জু বিশ্বাস, আরতি সাহা, সাবিত্রী পোদ্দার।
বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মিজানুর রহমান ও তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদবর্গ। বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মাত্র ১০টাকা দল নেতার হাতে ধরিয়ে দিলেন। মাত্র ১০ টাকা পথ সম্বল করে আর এক অবাঙ্গালীকে পথ প্রদর্শক করে বিদায় জানান হলো মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু তাদের বলে দেওয়া হলনা কোথায় যেতে হবে কি করতে হবে!
অক্টোবর মাসের দিকে হাওড়া স্টেশন থেকে রওয়ানা হয়ে আসাম যাওয়া হয়। পথে কোন খাওয়া দাওয়া হয় নাই। এক পর্যায়ে দলের গাইড অবাঙ্গালী লোকটি মেয়েদের পথ মধ্যে ছেড়ে চলে গেলেন। উপোষ কতক্ষণ থাকা যায়! হাতে মাত্র ১০টাকা! তখন ১টাকায় ৮টি কমলা পাওয়া যেত, কাজেই শুধু কমলা খেয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করা হল।
এভাবে চলতে চলতে দলটি সিলেটের করিমগঞ্জ সীমান্তে আসে। এখানে এসে শরণার্থী ক্যাম্প দেখতে পেয়ে দলটি ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে। ক্যাম্পে ঢুকে দেখা হয় এক বাংলাদেশী ছেলের সাথে যার নাম ছিল মাখন। ৮/৯ দিনের উপোষ থেকে থেকে দলের সবার ক্ষুধার যন্ত্রণায় আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জ্ঞান হারাবার উপক্রম, তাই দলের কারো শক্তি ছিলনা যে কাউকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলার।
বাংলাদেশী ছেলেটি মেয়েদের অবস্থা বুঝতে পেরে শিউরে উঠলেন। চট জলদি শুকনো আম পাতা জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে মেয়েদের শরীর গরম করার ব্যবস্থা করলেন। তারপর সব কিছু শুনে রেশনের চালের ফেন ভাত খাওয়ালেন। সান্ত্বনা আর আশ্বাস দিয়ে ক্যাম্পের তাবুতে মেয়েদের ঘুমাতে দিলেন।
কিন্তু বিপদ দেখা দিল আবার। ভারতীয় সেনাবাহিনী মেয়েদেরকে পাকিস্তানী গুপ্তচর হিসাবে জোর করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়। সাথে অশ্লীল গালাগালি। বহু বলে কয়ে প্রমাণ করা হলো যে মেয়েরা পাকিস্তানী গুপ্তচর নয় বরং মুক্তিযোদ্ধা বাঙ্গালী মহিলা। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হলো না। তারা হুকুম করে তাদের ক্যাম্পে গিয়ে তাদের সেবা করতে হবে। এর মধ্যে এক ফাঁকে দলনেতা অনিলা সটকে পালিয়ে যায়।
অনিলা শরণার্থী ক্যাম্প ইন চার্জের কাছে খোলে বলেন যতসব বিপদের কথা। মাখন বাবুর সহযোগিতায় কোলকাতায় সাজেদা চৌধুরীর কাছে ভীষণ কঠোর ভাষায় টেলিগ্রাম পাঠান।-
--- মেয়েদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে নিজেরা গদিতে বসে আছেন। আমাদের বিমানে পাঠানোর কথা ছিল। সে টাকা আপনারা আত্মসাৎ করে আমাদেরকে ট্রেনে পাঠিয়েছেন। নিজের সন্তান হলে নিশ্চয় নিজেরা গদিতে থেকে ঠিকানা না দিয়ে এক অবাঙ্গালীর হাতে ছাড়তেন না। যদিও জানি যুদ্ধে করতে যাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট। আপনাদের ভিতর কোন প্রকার মনুষ্যত্ব নাই। দেশ স্বাধীন হলে দেখে নেব-!!!!!
এতসব করার পরও একদিন মেয়েদের তাবুতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢুকে পড়ে। তখন মাখন বাবু সহ মুক্তিযোদ্ধা মেয়েরা তাদের প্রতিহত করে।
অনিলার সেই টেলিগ্রাম পাবার পর কোলকাতা থেকে মেয়েদের যাবার জন্য নির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা জানান হয়। মাখন বাবুর কাছে কয়েক দিন মেয়েরা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে। মাখন বাবু একটি জীপ গাড়ি করে আগরতলা পৌঁছে দেন। রাতে সাইগল নামের এক ভদ্রলোকের অফিসে রাত কাটায় মেয়েরা। সকালে সেখান থেকে আগরতলা ও কুমিল্লার সীমান্তে বিশ্রাম গঞ্জ নামক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল।
এই বিশ্রামগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর জন্য ৪৮০ বেডের একটি বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল বানান হয়েছে।
এখানে মেয়েদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান- ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম, ডাঃ নাজিম উদ্দিন আহমদ। সাথে আরও ছিলেন- ক্যাপ্টেন আক্তারের স্ত্রী খুকু, বেগম সুফিয়া কামালে ২ মেয়ে লুলু, টুলু, পদ্মা সরকার, নীলিমা বৈদ্য, বাসনা চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে।
মেয়েরা সরাসরি যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে আসার পরও , এখানে থেকে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ শুনে মেয়েদের মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা কম কথা কথা নয়। ভেবে মেয়েরা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় লেগে যায়।
এই ফিল্ড হাসপাতাল প্রথমে মেলাঘরে ছিল পরে আহতের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে এখানে স্থানান্তর করা হয়। এই হাসপাতালের ব্যয়ভার ডাঃ জাফরুল্লাহর বন্ধু লন্ডন প্রবাসী কাজী কামরুজ্জামান ও অন্যান্য ডাক্তাররা বহন করতেন। সেখান থেকে তারা নিয়মিত প্রয়োজনীয় ঔষধ ও যন্ত্রপাতি পাঠাতেন। ভারত থেকে কিছু কিছু সাহায্য পাওয়া যেত।
হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থা ছিল ভয়াবহ! কারও হাত উড়ে গেছে, কারও বা পা উড়ে গেছে। সে এক বীভৎস দৃশ্য! কেউ সারা রাত যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। তবুও বাংলার সাধারণ মানুষের সন্তানরা ভয়ে ভীত নয় বরং প্রবল প্রতিশোধের স্পৃহায় একটু সুস্থ হলেই যুদ্ধের জন্য রণাঙ্গনে চলে যাচ্ছে। অনেকে তাদের বাবা মা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনকে হারিয়েছেন। কেউ তাদের খবর জানেন না। ভাবনা হাত পা উড়ে যাক তারপর তো দেশ স্বাধীন হবে।
এই ভাবে একদিন বিজয়ের ধ্বনি এলো। সবাই বিশ্রামগঞ্জের হাসপাতাল ছেড়ে ১৭ই ডিসেম্বর দেশের পথে রওয়ানা হয়ে গেলেন। শুধু গীতা কর সহ অন্য মেয়েরা রয়ে গেলেন। কারণ দেশে তাদের কোন নিকট জন ছিলেন না।
অবশেষে ১৫/২০ জন আহত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে কুমিল্লার সোনাইমুড়ি সীমান্ত দিয়ে মেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তদেশে প্রবেশ করেন।
আমি যখন এই পোস্ট আমারব্লগের পোস্ট করি সে সময়ে আমারব্লগের সহব্লগার অনুজপ্রতিম অনুলেখা তিনি ঘটনাক্রমে রাজবাড়িতে গিয়েছিলেন। উনি আমার পোস্টে গীতাকরের ঘটনা জানতে পেরে সরাসরি গীতাকরের সাথে দেখা করে আসেন।
বাকিটি অনুর লেখা থেকে তুলে দিচ্ছি- শুভেচ্ছা, পরিচয় পর্ব এবং উদ্দেশ্য জানাতেই কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করলেন ঠিক এভাবে "মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম দেশের জন্য, দেশ পেয়েছি। তবে আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে আমার অবদানের স্বীকৃতি পাইনি। এ স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের; সে দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে দুর্ভাগ্য আমাদের"।
অনু সাক্ষাতকার শেষে আবার গীতাকরের কাছে জানতে চান- স্বাধীনতার ৪০ বছর পর তাঁর মনে কোন দুঃখ আছে কিনা? তিনি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে বলেন "স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই। মৃত্যুর পূর্বে চাই মুক্তিযুদ্ধে আমার অবদানের সরকারী স্বীকৃতি, এই রাষ্ট্রের নিকট এটাই আমার শেষ আকুতি"।
আজ স্বাধীনতার এত বছর পর গীতা কর জাতীর কাছে জানতে চান- কত মৃত্যু, কত নির্যাতন, কত যন্ত্রণা আর কষ্ট হেলাভরে পিছনে ফেলে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর সহ শিক্ষিত মানুষেরা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু মেহনতি মানুষের ঘরে স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ আজও কেন পৌছাইনি? কেন? কেন? কেন?
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গীতাকরের অবদান স্বীকার করে যে প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল-
কালের কণ্ঠ
ইত্তেফাক
জনকণ্ঠ
প্রথম আলো
আমার ভাবনার লাইব্রেরীতে আপনাকে স্বাগতম! সমাজ,রাজনীতি, রাষ্ট্র ও ধর্মকে আমি যে ভাবে দেখি বা বুঝে থাকি তা এই ব্লগে গোডাউন করে রেখেছি। ভুলত্রুটি থাকা স্বাভাবিক! নিজ সময় বরবাদের জন্য নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ হাফেজ!
রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১১
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটুর কাংখিত স্বাধীনতা!!
আমি যখন ২০০৬ জুনে সাভার ইপিজেড এ কাজে জয়েন করি তখন থেকে, কর্মস্থলে যাবার কালে পথ মধ্যে, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটের ঠিক উল্টা দিকে, সাভার ডেইরী ফার্মের ডান পাশে দেখতে পাই লাল ইটের বাঁধান একটি কবর।কবরে উপরে দুটি ফুল গাছ, একটি বকুল অন্যটি কামিনী যেন কবরটিকে ছায়া দিয়ে গভীর মমতায় আগলে রেখেছে। লাল ইটের দেওয়ালে শ্বেত পাথরের ফলকে লেখা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটু। স্বভাবত কৌতুহল জাগে কে এই টিটু ? আর তার কবর বা বেদী এখানে কেন?
গাড়ির সহযাত্রীদের কয়েক বার জিজ্ঞেসও করে দেখেছি কেউই জবাব দিতে পারেন নাই। অবশেষে গত ২১শের বই মেলায় কিনা সদেরা সুজন সম্পাদনায় আমার দেখা ১৯৭১ বইয়ে ইমরুল ইউসুফের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটোর গল্প পড়ে এই মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী জানতে পারি। শহীদ টিটুর প্রতি আমার শ্রদ্ধায় বুক ভরে উঠে। হয়তো অনেকে জানেন তবুও যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে এই কাহিনী বর্ণনা করছি।
মানিকগঞ্জের শ্যামলা রঙ এর কিশোর ছেলে টিটু, চোখে ছিল দুনিয়ার মায়া ভরা দৃষ্টি, ক্লাস সেভেনে পড়তেন। ঐ বয়সের কিশোরা যা যা করত টিটুও ২৫শে মার্চের আগে তাই করতেন- ফাঁদ দিয়ে ঘুঘু ধরে, নদীতে সাঁতার কেটে, নৌকাও বেয়ে হাসি আনন্দে সময় কাটাতেন। কিন্তু ২৫শে মার্চ এই কিশোরটার সব কৈশোরের অভ্যাস দানবদের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে নিমিষে বদলে দিল। কারণ ঐ দানবরা ওর ভাইকে রাইফেলে লাগানো বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে, তার সারা গ্রাম জ্বালিয়ে পোঁড়ে ভস্মিভুত করে। ওর চোখের সামনে খান সেনারা কয়েক’শ নিরীহ মানুষকে মেরে আগুন দিয়ে পোড়ে ফেলে।
তাই সে প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে এবং ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পথ খুঁজতে থাকে। অবশেষে দুই নম্বর সেকটর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সাথে দেখা হয়।ওর অভিপ্রায় জানায়। খালেদ মোশাররফ, এক যুদ্ধ পূর্ণ গভীর রাতে এই কিশোরকে, সাভারের মুক্তিযুদ্ধা টিম লিডার- নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কাছে দিয়ে যান।
অল্প সময়ের মধ্যে টিটুর সাথে নাসির উদ্দিন ইউসুফের খুব ভাব হয়ে যায়। টিটুর কেবল এক আবদার সে যুদ্ধ করবে, তাকে যুদ্ধের ট্রেনিং দিতে হবে। বাচ্চু ভাবেন মাত্র ১৫ বছরের কিশোরকে যুদ্ধে জড়ান ঠিক হবে না। জিজ্ঞেস করেন- তুমিতো এতো ছোট কেমন করে যুদ্ধ করবে? টিটু দৃপ্ত ভাবে চিত্কার করে বলে- আমি অগো বেবাকরে মাইরা ফালামু,ওরা আমার ভাইরে মারছে। আমি অগোরে আগুনে পুইড়া ছাই বানাবো।ওরা আমাগো গ্রাম গুলোকে পুইড়া ছাই বানাইছে। সব কয়টারে গুলি করে মাইরা প্রতিশোধ নেব।
বাচ্চু এতটুকু কিশোরের প্রতিশোধ স্পৃহা দেখে জিজ্ঞেস করেন- টিটু স্বাধীনতা বলতে কি তুমি জানো? টিটু বলে- হ’ জানি! সবাই কয় দেশ স্বাধীন হইলে সবাই নাকি সুখে থাকবো। ভাত কাপড়ের অভাব হইবোনা। দ্যাশ থিক্যা অশান্তি দুর হইবো। আমি স্বাধীনতা দেখমু। আমি যুদ্ধ করুম।
যদিও টিটুকে কিছু অস্ত্র ব্যবহার শেখানো হলো কিন্তু বয়সে খুব ছোট থাকায় তাকে সরাসরি যুদ্ধে শরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো না। অথচ তার জেদ সে যুদ্ধ করবেই। তাকে বুঝানো হলো যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা শোনা সেবা যত্ন করাটাও যুদ্ধ। তাকে সে দায়িত্বটা দেওয়া হল। কয়েক দিনের মধ্যে সে সবার প্রিয় হয়ে উঠলো।
মাস খানেকের মধ্যেই ঢাকা সাভার আরিচা সড়কের দুই পাশ দখলে আসে মুক্তিযুদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাভার থানাও ঘেরাও করে মুক্তিযুদ্ধারা।ঐ সময় একদল পাকিস্থানী সেনাদল ঢাকার পথে ফিরছিলো। এরা এসে সাভার থানার পাকিস্থানী সেনাদের সাথে যোগ দিলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।সাথে সাথে বাচ্চু ওদের প্রতিরোধে নেমে পড়লেন। ১৪ই ডিসেম্বরের ভোরে, চার’শ মুক্তিযোদ্ধাদের বাচ্চু রণকৌশল বলে দিয়ে মাত্র ৫০ জনকে জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় রেখে, বাকী অন্যদের চার ভাগে ভাগ করে দেন। এই ৫০ জনের দলে পড়ে টিটু, সে এটা মানতে পারেনা। সে বাচ্চুকে বলে- যুদ্ধে আমারে নিয়া যান। আমিও যুদ্ধ করুম। বাচ্চু গভীর আবেগে টিটুকে আদর করে বলেন- এই যুদ্ধে আমরা অনেকে না ফিরতে পারি। তুমি থাকো। টিটু কেঁদে বলে-আপনারা সব মইরা যাইবেন আর আমি বাইছা থাকুম ক্যান? আমিও মরুম। বাচ্চু টিটুকে জড়িয়ে ধরে বলেন- টিটো তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি না স্বাধীনতা দেখতে চাও?
যুদ্ধ শুরু হলো। তুমুল লড়াই। কিন্তু হেভী মেশিন গানটিকে ধ্বংস করতে না পারলে এ যুদ্ধে পাকিস্থানীদের হারানো যাবে না।
বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে লিডার বাচ্চু সহযুদ্ধা আরিফকে নির্দেশ করলেন- সে যেন দৌঁড়ে ২ নম্বার দলের যুদ্ধা নুরুকে বলে- যেমন করে হউক ঐ হেভী মেশিন গানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। আরিফ লিডারের নির্দেশ মতো না গিয়ে, কিশোর টিটুকে নির্দেশ দিলো। যার রক্তে প্রিয়জন হারানোর প্রতিশোধ স্পৃহা ও যার চোখে এক শোষণ মুক্ত স্বাধীনতার স্বপ্ন তাকে আর কে পায়। নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে কাভারে না রেখে লাফ দিয়ে উঠে। কোন রৃপ রাখ ঢাক ছাড়া মুক্তি পাগল কিশোর, সোজা নুরুকে লক্ষ্য করে দৌঁড়াতে লাগল আর চিত্কার করে নুরুকে বলছিলো লিডারের নির্দেশ। ঠিক তখনই শত্রু সেনার হেভী মেশিনগানের এক ঝাঁক বুলেট এসে বিদ্ধ করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা কিশোর টিটুর বুকে। বুলেটের আঘাতে, আঘাতে মাটি থেকে কয়েক হাত উপরে উঠে, ধাপাস করে মাটিতে পড়ে যায় টিটুর শরীর।মেসিনগানের বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা করেছে টিটুর বুক। টিটু তখন চিত্কার বাচ্চু ভাইকে ডাকে- বাচ্চু ভাই আমাকে বাঁচান।
মুক্তিযুদ্ধারা তাদের প্রিয় কিশোর টিটুর এই অবস্থা দেখে শোককে প্রতিশোধের অগ্নিতে রূপান্তরিত করে। যুদ্ধের সব নিয়ম কানুন ভুলে এক শ্বাসরুদ্ধ কর যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্থানীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।
যুদ্ধ শেষে প্রতিটি যুদ্ধার একটাই প্রশ্ন - টিটু বেঁচে আছে কি? হ্যাঁ সে তখনো কাতর কণ্ঠে বলে- আমারে বাঁচান! আমি স্বাধীনতা দেখুম। স্বাধীনতা দেইখ্যা মরুম।আমারে বাঁচান!!!!!
টিটুর রক্তে ভেসে গেল ক্যাম্পের মাটি। এমাটি ধন্য হলো তার আর এক সন্তানের তাজা বুকের রক্তে শিক্ত হয়ে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে টিটু আর পাশে অসহায় সব সহযোদ্ধারা। সবার চোখে অশ্রুর বন্যা। টিটু বার বার বলতে থাকে তার খুব ব্যথা করছে। খুব শীত লাগছে। সহযোদ্ধারা একে একে ২০টি কম্বল দিয়ে টিটুকে ঢেকেও শেষ রক্ষা করতে পারছে না.... টিটুর কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে...... এখন ওর শুধু ঠোঁট কাঁপছে..... এক সময় তাও বন্ধ হয়ে গেল.. টিটু এখন সকল যন্ত্রণার উর্দ্বে চলে গেছে -- মৃত্যুর সময় হয়তো বিড় বিড় করে বলে গেছে- আমিতো স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলামনা। কিন্তু আমার দেশ স্বাধীন হবে, দেশ স্বাধীন হইলে সবাই সুখে থাকবো? ভাত কাপড়ের অভাব হইবোনা?? দ্যাশ থিক্যা অশান্তি দুর হইবো???
বি.দ্র. শহীদ টিটু বেঁচে থাকলে প্রায় আমার মতো বয়সী থেকে হতেন । কারন আমিও ঐসময় সেভেনের ছাত্র ছিলাম।সেই কারণে টিটু প্রতি আমার একটু অন্য রকমে ভাব আসে, রোজ যখন ওর কবরকে পাশ কেটে যাই। অজান্তে হাতটা কপালের কাছে উঠে আসে। এই প্রজন্মের শহীদ টিটুর উত্তরসুরীদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন মনের সব কটা জানালা খোলে ভেবে দেখুন, আজ ৩৯ বছর পরেও শহীদ টিটুর স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তি হলোনা কেন? কারন এই দেশের ৯৯ জন মানুষই টিটুর মতো স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষকে কোটিপতি আমলা জেনারেল প্রধান মন্ত্রী বানাতে নয়!!!!!!!
আমি স্বাধীনতার ১৬ বছরে যখন তরুণ ছিলাম তখন একটি কবিতা লিখে ছিলাম। যা আমার প্রথম ছাপানো কবিতা। আজ তা উত্সর্গ করছি এই মহান শহীদ টিটুকে। প্রিয়তমা তুমি এলেনাতুমি এলে ভস্মস্তুপ থেকেলাল সিঁদুরের টিপ পরে;তোমার মধ্য থেকে,আমার ষোড়শী প্রিয়তমাআসার কথা ছিলো,কিন্তু সে এখনও এলো না।।হতাশার কফিন থেকেতুমি উঠে এলেথেৎলানো দূর্বা ঘাসের উপরেলাল কার্পেট বিছিয়েক্ষত বিক্ষত হৃদয়েউন্মত্ত প্রস্রবণ ধারায়স্বপ্নের আলো জ্বেলে,বিক্ষুব্ধ জলোচ্ছাসে,রক্ত মাখানো পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে,যুবতী বধু অবগুণ্ঠন থেকেএক ঝিলিক আলোর চমকানো দিয়েশুধু তুমি এলে।অথচঃতোমার মধ্য থেকেযে ষোড়শী প্রিয়তমারআসার কথা ছিলোএখনও সে এলো নাপ্রিয়তমা তুমি আজো এলে না।।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)